প্রকাশিত:
৫ ঘন্টা আগে
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে হোয়াইট হাউসের ব্যবস্থাপনা ও বাজেট মন্ত্রণালয়ের পরিচালক রাসেল ভট সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন, যা তার দপ্তরের মুখপাত্র কর্তৃক 'বড় পরিসরে' হচ্ছে বলে নিশ্চিত করা হয়। পরে শুক্রবার বিকেলে প্রশাসন জানায়, সাতটি সংস্থায় ৪ হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই বা ছুটিতে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেল কর্মীবাহিনী কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন এবং বারবার বলেছেন যে, তিনি সরকারি অচলাবস্থাকে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবেন।
আইন অনুযায়ী, সরকার কর্মী ছাঁটাইয়ের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে আগাম নোটিশ দিতে বাধ্য। রাসেল ভটের ঘোষণার পর ট্রেজারি বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ কর্মীদের ছাঁটাই সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগও জানায়, তাদের সাইবারসিকিউরিটি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সিতে ছাঁটাই হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা নথি অনুসারে, প্রায় ৪ হাজার ৬০০ কর্মীকে শুক্রবার থেকে ছুটিতে যাওয়ার নোটিশ দেওয়ার কথা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিভাগে প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কর্মী, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ জন, শিক্ষা ও আবাসন ও নগর উন্নয়ন বিভাগে কমপক্ষে ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ পাচ্ছেন। এছাড়া বাণিজ্য, জ্বালানি, আবাসন ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে ১৭৬ থেকে ৩১৫ জন পর্যন্ত কর্মী কমানো হবে।
এদিকে, আমেরিকার দুটি বড় শ্রমিক ইউনিয়ন—আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িস (এএফজিই) ও এএফএল-সিআইও—রাসেল ভটের এই পরিকল্পনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেছে। এএফজিই সভাপতি এভারেট কেলি এই পদক্ষেপকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি অচলাবস্থাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশজুড়ে হাজারো কর্মীকে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করছে।
এই ছাঁটাই পদক্ষেপকে অভূতপূর্ব বলা হচ্ছে। কারণ অতীতে সরকারি অচলাবস্থায় কর্মীরা বেতন ছাড়া ছুটিতে গেলেও সরকার পুনরায় চালু হলে তারা বকেয়া বেতন পেতেন। কিন্তু এবার ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, তা হয়তো দেওয়া হবে না।
বর্তমান শাটডাউন শুরু হয়েছে ১০ দিন আগে, যখন কংগ্রেস সদস্যরা সরকারি তহবিল বাড়ানোর কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। রিপাবলিকান সিনেটর জন থুন বলেন, ১০ দিন অপেক্ষা করার পর হোয়াইট হাউসকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হতো যে কোন খাতে ব্যয় অগ্রাধিকার পাবে।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার ট্রাম্প ও রাসেল ভটের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ করেছেন। ডেমোক্রেটরা রিপাবলিকান ব্যয়ের প্রস্তাবে ভোট দিতে অস্বীকার করেছেন, কারণ তাতে স্বাস্থ্যবিমার খরচ কমাতে সাহায্যকারী করছাড় নবায়ন এবং মেডিকেইড-এর কাটছাঁট প্রত্যাহারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি অচলাবস্থায় অত্যাবশ্যক নন এমন ফেডারেল কর্মীদের বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হয়। বর্তমানে এর প্রভাব পড়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর ওপর, যা ফেডারেল কর্মীবাহিনীর প্রায় ৪০ ভাগ।
ফেডারেল কর্মীসংখ্যা হ্রাস করা রাসেল ভটের কাছে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রাধিকার। ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারি থেকে ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাঁটাই, স্বেচ্ছাবিদায়, প্রশাসনিক ছুটি ও পদত্যাগ মিলিয়ে হাজারো কর্মী কমিয়েছে।
পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস নামের একটি দ্বিদলীয় গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেডারেল কর্মীবাহিনী প্রায় ২ লাখ কমেছে। কর্মসংস্থান পরামর্শক সংস্থা চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস জানিয়েছে, এ বছর সরকারি খাতে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৫টি চাকরি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৩ জন ফেডারেল কর্মী প্রভাবিত হয়েছেন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এটিসিয়েন্সি বা ডজ উদ্যোগের মাধ্যমে। এই ব্যয়সংকোচন প্রচেষ্টা প্রথমে পরিচালনা করেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক।